শাহীন মাহমুদ রাসেল :: করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রতিরোধে মানুষকে ঘরে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। মানুষকে ঘরে রাখতে প্রচার প্রচারণা থেকে শুরু করে পুরো জেলা লকডাউনসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের সেই পরামর্শ বা সরকারের নির্দেশনা মানছে না অনেকেই। বিভিন্ন অজুহাতে বাইরে বের হয়ে আড্ডা দিচ্ছেন কেউ কেউ।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণকে বিশ্বব্যাপী মহামারি হিসেবে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বাংলাদেশেও সবাই ভীত এই সংক্রামক রোগ নিয়ে। করোনা থেকে বাচতে সচেতনতা অবলম্বন করতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এক্ষেত্রে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং জনসমাগম এড়িয়ে চলার কথা বলা হচ্ছে। তবে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন স্থানে এমন নির্দেশনা মানা হচ্ছে না।
সদর ও রামুর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, গত দুদিনের তুলনায় বুধবার রাস্তাঘাটে জনসাধারণের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি। কেউ আড্ডা দিচ্ছেন চায়ের দোকানে। আবার কেউ ফাকা রাস্তায় ঘুরছেন। গত কিছুদিন টানা বাড়িতে অবস্থান করে হাপিয়ে উঠেছেন কেউ কেউ; তাই বের হয়েছেন রাস্তায়। জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া কিংবা কর্মজীবী মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়।
শহরের টেকপাড়া এলাকায় কথা হয় বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জুয়েলের সাথে। তিনি বলেন, বেশ কয়েকদিন বাসা থেকে বের হইনি। কিন্তু কতক্ষণ বাসায় থাকা যায়! তাই একটু হাটাহাটি করতে বাসার নিচে নামলাম।
রামুর কলঘর বাজার এলাকায় খোলা রয়েছে কাঁচাবাজার এবং নিত্য পণ্যের দোকান। সেখানেও ক্রেতার সংখ্যা নেহাত কম নয়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কাউছার এসেছেন নিত্যপণ্য কিনতে। তিনি বলেন, গত সপ্তাহে বাজার করেছিলাম, সেগুলো শেষ হয়ে গেছে। তাই সওদা করতে আসলাম। এই পরিস্থিতিতে বের হতে ইচ্ছা না করলেও বাধ্য হয়েই বের হয়েছি।
খরুলিয়ার একটি অস্থায়ী চায়ের দোকানের পাশে আড্ডা দিচ্ছিলেন বেশ কয়েকজন টমটম ও রিকশাচালক। তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েক দিনের তুলনায় আজ তাদের আয় বেশি হয়েছে। পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বন্ধ থাকায় তাদের যাত্রীর সংখ্যাও বেশি বলে দাবি করেছেন তারা।
কলঘর বাজারেও ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। কেউ কেউ পরিস্থিতি কেমন সেটা পর্যবেক্ষণ করতে বের হয়েছেন বলে দাবি করেছেন। চাকমারকুল এলাকার বান্দিনা আলমগীর বলেন, বাইরের বাতাস না নিলে অসুস্থ হয়ে পড়ি। এ কারণে একটু হাটাচলা করছি।
করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রথমে বেশ কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে গত কয়েকদিনে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের সহনশীলতা, পেশাদারিত্ব ও বিনয়ের সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান পুলিশের উর্ধতনী কর্মকর্তারা।
পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, জনজীবন সচল রাখতে চিকিৎসা, ওষুধ, নিত্যপণ্য, খাদ্যদ্রব্য, বিদ্যুৎ, ব্যাংকিং ও মোবাইল ফোনসহ আবশ্যক সকল জরুরি সেবার সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তি ও যানবাহনের অবাধ চলাচল নিশ্চিত করুন এবং দায়িত্ব পালনকালে সাধারণ জনগণের সাথে বিনয়ী, সহিষ্ণু ও পেশাদার আচরণ বজায় রাখুন।
এদিকে কক্সবাজারে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নতুন আরো ১৭ জন রোগী সনাক্ত হয়েছে। মোট ১২০ জনের স্যাম্পল টেস্টের মধ্যে বাকী ১০৩ জনের রিপোর্ট নেগেটিভ পাওয়া যায়। এ নিয়ে কক্সবাজারের মোট করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা হলো ৩৭ জন। কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. অনুপম বড়ুয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন বলেন, সরকারী নির্দেশনা পালনে মাঠ পর্যায়েও সচেতনতা সৃষ্টিতে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। লিফলেট বিতরণ ও মাইকিং যতক্ষণ চলে সেই স্থানের লেকজন ততক্ষণ ঘরে থাকে। প্রচারকারীরা চলে আসলে নির্বোধ মানুষগুলো বাইরে চলে এসে জটলা পাকায় বলে খবর পাচ্ছি। তিনি আরোও বলেন, শহরের বিভিন্ন এলাকাতেও একই অবস্থা। নিজেরা সচেতন না হলে সার্বক্ষণিক তদারকি করা প্রশাসনের পক্ষে কষ্টকর। তবুও আমাদের প্রচেষ্টা থেমে নেই।
পাঠকের মতামত: